Odhikar

২০১৩ সালে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত  হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর

৪ মে ২০২৫

অধিকার এর বিবৃতি

১২ বছর আগে ঢাকার মতিঝিলে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে তৎকালীন হাসিনা সরকারের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়।

অধিকার এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে সরজমিনে তথ্যনুসন্ধান করে এবং অন্ততপক্ষে ৬১ জন বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশে এত বড় একটা হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটলেও ঐ সময়ে অন্য কোন মানবাধিকার সংগঠন কিংবা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করেনি। ঐ সময়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়।

তথ্যনুসন্ধান প্রকাশ করার পর আওয়ামী লীগ সরকার অধিকারএর কাছে নিহতদের নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত তালিকা চাইলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অধিকার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবী জানায় এবং সেই কমিটির কাছে তালিকা হস্তান্তর করবে বলে জানায়। কিন্তু সরকার কোন তদন্ত কমিশন গঠন করে নাই। বরং ২০১৩ সালের ১০ অগাস্ট রাতে অধিকার এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র সদস্যরা তাঁর বাসার গেটের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। গুলশান থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা তাঁকে তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। সারারাত গুম করে রেখে পরদিন আদিলুর রহমান খানকে আদালতে হাজির করা হয়। ফৌজদারী ৫৪ ধারায় আদিলুর রহমান খানকে আটক দেখিয়ে ডিবি পুলিশ তাঁকে রিমান্ডে নেয়। এরপর  ২০১৩ সালের ১১ অগাস্ট গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশী চালিয়ে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপসহ অধিকার কার্যালয়ে সংরক্ষিত বিভিন্ন ডক্যুমেন্ট নিয়ে যায়, যেখানে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভিকটিম ও তাঁদের পরিবারগুলোর সংবেদনশীল তথ্য ছিল। অধিকারকে হয়রানি ও এর সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিহতদের ভূয়া তালিকা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ ও প্রচারের ব্যবস্থা করে।

ঐ সময়ে সরকার সমর্থিত সংবাদ মাধ্যমগুলো গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহকৃত ভূয়া তালিকা নিয়ে মনগড়া রিপোর্ট  প্রকাশ করে। পরবর্তীতে আদিলুর রহমান খান এবং অধিকার এর পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে  নির্বতনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০০৯) এ অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়। আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে যথাক্রমে ৬২ ও ২৫ দিন কারাগারে আটক রাখা হয়।

এরপর  দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিচারিক হয়রানীর পর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক জুলফিকার হায়াৎ ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই মামলায় কোন তথ্য প্রমান ছাড়াই আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে অভিযুক্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়াও তৎকালিন হাসিনা সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অধিকার এর কণ্ঠরোধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন এবং সরকার সমর্থকদের মালিকানাধীন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে হয়রানী করার চেষ্টা করে।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিষয়টি সামনে আসে। ২০২৫ সালের ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

অধিকারএর সুপারিশ

১.       অধিকার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

২.       অধিকার হতাহতের শিকার পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে।

৩.      এই ঘটনায় যে সব মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহারের দাবী করছে।

 

Subscribe

Subscribe to our e-mail newsletter to receive updates.