Odhikar

নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁর কোমর থেকে পা পর্যন্ত মারাত্মকভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়, যার ফলে কালো ফোলা জখমের চিহ্ন দেখা গেছে বলে দাবি করেন তাঁর ভাই সাদেকুর রহমান। অধিকার এই বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে তৎকালীন কর্তৃত্ববাদী সরকারের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিরোধী দল ও মত দমন করতে নির্যাতন এবং তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটাসংস্কার আন্দোলন দমন করতে শেখ হাসিনা সরকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, যার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তবে গণহত্যা চালিয়েও সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, এবং গণবিস্ফোরণের ফলে তাদের পতন ঘটে। ছাত্র-জনতার মূল অনুপ্রেরণা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার, যাতে ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত করতে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। তবে এরপরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ উঠেছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ৮ জন ব্যক্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও যৌথ বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দল দমন করতে বিচারবহির্ভূত হত্যা শুরু করে। বিপ্লবী বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সিরাজ শিকদারসহ কয়েক হাজার তরুণ ও যুবককে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সরকারগুলোও এই ধারা অব্যাহত রাখে।

৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ আশা করেছিল যে, নির্বাচিত সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসান ঘটাবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে অপারেশন ক্লিনহার্ট চালিয়ে বহু মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করে। ২০০৪ সালে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠন করা হয়, যার হাতে ব্যাপক নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটে। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনে নিহত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৪৬ জন ব্যক্তি নির্যাতনে নিহত হন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকে। অথচ ২০০৯ সালে জাতিসংঘের ইউনিভার্সেল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) তে তৎকালিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে বলে জানায়। কিন্তু এরপর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে। পতিত কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালের ১৫ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর নামে বিপুল সংখ্যক মানুষকে মূলত ক্রসফায়ার দিয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করে। এই সময় নির্যাতনের মাধ্যমেও হত্যার ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে। এই সময় বিচারবহির্ভূত  হত্যাকান্ডের পাশাপাশি গুমেরও ঘটনা ঘটতে থাকে। গুম অবস্থা থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিরা তাঁদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া অনেক  গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালের ০৬ জানুয়ারী থেকে  ২০২৪ সালের ০৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে  ১৮২ জন ব্যক্তি নির্যাতনের ফলে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

এই পরিস্থিতিতে নির্যাতনে হত্যাসহ সবধরণের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা কথিত নির্যাতনে মৃত্যুর তথ্য (২০০১-২০২৫)

সরকার

সময়কাল

নির্যাতনে মৃত্যু

বিএনপি সরকার

১০ অক্টোবর ২০০১ – ২৮ অক্টোবর ২০০৬

১৭০

তত্ত্বাবধায়ক সরকার

২৯ অক্টোবর ২০০৬ – ০৫ জানুয়ারি ২০০৯

৪৬

আওয়ামী লীগ সরকার

০৬ জানুয়ারি ২০০৯ – ০৫ আগস্ট ২০২৪

১৮২

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

০৯ আগস্ট ২০২৪ – ৩১ জানুয়ারি ২০২৫

মোট 

৪০৬

 

 

 

 

Subscribe

Subscribe to our e-mail newsletter to receive updates.

, , , , , , ,