২২ ডিসেম্বর, ২০২৪: ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট ধামরাই এর নিজ বাসা থেকে র্যাব কর্তৃক গুম হন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি রহমতউল্লাহ। তাঁর পরিবার র্যাব কার্যালয়, বিভিন্ন ডিবি অফিস ও থানায় সন্ধান করলেও তাঁরা তাঁকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। গুম হবার পর প্রায় ৯ মাস বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রহমতউল্লাহকে চোখ বেঁধে রাখা হত এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। এরপর তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ‘অবৈধ’ অনুপ্রবেশের দায়ে তাঁকে দম দম কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। তিনি ০৭ মাস ভারতে ছিলেন।
গত ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ রাতে ভারতীয় বিএসএফ মহানন্দা নদী দিয়ে রহমতউল্লাহকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করে। ১৬ মাস পর রহমতউল্লাহ গুম অবস্থা থেকে মুক্ত হন এবং বাংলাদেশে ফিরে আসার পর এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানায় উপস্থিত হন। রহনপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই মোঃ ফজলে বারী রহমতউল্লাহর পরিবারের কাছে ফোন দিলে পরিবারের সদস্যরা সেখানে যেয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য ২০১২ সালের ০৫ নভেম্বর ঢাকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক অপহৃত হন সুখরঞ্জন বালি এবং পরবর্তীতে তাঁকে ভারতে কলকাতার দমদম কারাগারে পাওয়া যায়। এছাড়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ১০ মার্চ ২০১৫ সালে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী কর্তৃক ঢাকা থেকে গুম হবার পর ২০১৫ সালের ১১ মে তাঁকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে আটক দেখায় পুলিশ।
অধিকার এর প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৭২১ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৫৮ জন ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত ফেরত পাওয়া যায়নি। প্রকৃত গুমের সংখ্যা আরো অনেক বেশী বলে অধিকার মনে করে। মূলত হাসিনা সরকারের বাংলাদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এ সংক্রান্ত কর্মকান্ড ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। বাংলাদেশ থেকে গুম করে ভারতে নিয়ে যাবার ঘটনাগুলো তাই প্রমাণ করে।
অধিকার মনে করে বাংলাদেশ থেকে গুম হওয়া আরো ভিক্টিমদের ভারতের কারাগারে বন্দী করে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য বাংলাদেশ সরকার এর উচিত ভারতের কারাগারে বন্দী সকল বাংলাদেশীদের তথ্য অবিলম্বে ভারত সরকারের কাছ থেকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যে সেই তালিকায় কোন গুমের ভিক্টিম রয়েছেন কি না। এছাড়া যে সব র্যাব সদস্য রহমতউল্লাহকে গুম করেছে তাদের সহ সব গুমের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। গুমের শিকার ভিকটিম ও পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংহতি জানিয়ে
অধিকার টিম