ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা এবং অধিকার-এর সাথে সম্পৃক্ত মানবাধিকার কর্মীরা গুম ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালনের উপলক্ষে রাজশাহী জেলায় একটি মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করেন।
প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এবং গুমের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের বিচারের দাবীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালন করা হয়। ১৯৮১ সালে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গড়ে ওঠা দক্ষিন আমেরিকার একটি সংগঠন ‘ফডেফ্যোম’ প্রথম এই গুমের বিরুদ্ধে সপ্তাহটি পালন করা শুরু করে। এরপর থেকেই গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সপ্তাহটি পালন করে আসছে। সপ্তাহটি পালন করার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল গুমের বিরুদ্ধে প্রচারকে শক্তিশালী করা।
২০২৫ সালের মে মাসে এই সপ্তাহটি বাংলাদেশে এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতন হয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কর্তৃত্ববাদী সরকার রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে গুমকে ব্যবহার করেছে। পতিত হাসিনার শাসনামলে সারা দেশে বেআইনীভাবে আটক রাখার বন্দিশালা তৈরি করা হয়। এই সব অবৈধ গোপন বন্দিশালায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী এবং তথাকথিত “জঙ্গিদের”আটক করে রাখা হতো। এরমধ্যে আলোচিত গোপন বন্দিশালা হলো ডিজিএফআই এর জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেন্টার এবং র্যাবের বন্দিশালা। এই বন্দিশালাগুলোতে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ভারতের স্বার্থের বিপক্ষে মূলত যাঁরা সোচ্চার ও প্রতিবাদী হতেন তাঁদেরই গুম করে নির্যাতন করা হতো।
অনেক গুমের শিকার ব্যক্তি এখনও ফিরে আসেনি, যারা ফেরত এসেছেন তাঁদের অনেককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, এবং অনেককে নির্জন সেলে আটকে রাখা হয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের উপর প্রচন্ড শারিরীক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং গুমের পর অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
অধিকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচীসহ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে এবং এই কারণে অধিকার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকার কর্তৃক নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালিীন সরকারের কাছে অধিকার এর দাবীসমুহ-
১. গুমের শিকার যে সব ব্যাক্তি ফেরত আসেননি তাঁদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জনগনকে জানানো।
২. যে সমস্ত গুমের শিকার ব্যক্তি এখনও ফিরে আসে নাই, তাঁদের স্ত্রী-সন্তানরা যাতে গুম হওয়া ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব পরিচালনা এবং স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বেচা এবং ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. গুমের পর কিছু ব্যাক্তিকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং পরে তাঁদের পাওয়া গেছে। তাই ভারতে আরো গুমের শিকার ব্যাক্তি আছেন কি-না সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ের যোগাযোগ স্থাপন করে তা জানা।
৪. যে সমস্ত ব্যক্তি গুমের পর ফেরত এসেছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি কাউকে কাউকে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বা নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে নিন্ম আদালতকে ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে।
৫. গুমের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করতে হবে।