ঢাকা, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪: ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী এই দিনটি যখন পালিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গনঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের মধ্যে দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নেয়। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপকভাবে রূপ নেয়। জুলাই-অগাস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমন করতে যেয়ে হাসিনা সরকার যে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘন করে তা ছিল নজিরবিহীন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য এবং ক্ষমতাসীনদলের নেতা-কর্মীরা এই সময়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি ছোঁড়ে। এতে শিশুসহ ১৫৮১ জন নিহত, ১৮,০০০ আহত এবং ৫৫০ জনের চোখ নষ্ট হয়ে যায়। অধিকার তার মানবাধিকার সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়েও হাসিনার শাসনমলে চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও হয়রানির সম্মুখিন হয়।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের পর ভারতীয় শাসকগোষ্ঠি সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে বিভিন্নভাবে এই অভ্যূত্থানকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় রত হয়েছে। এই সময়ে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছে। ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়েছে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। অধিকার বাংলাদেশের ওপর ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকার গত সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য দেশের সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে দলীয়করণের মাধ্যমে তাদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছিল। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হওয়ার ফলে রাজনৈতিক অসহনশীলতা ও রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্ন্তবর্তীকালিন সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করার লক্ষ্যে ৬ টি কমিশন গঠন করেছে।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ২৯ আগস্ট গুম হওয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত সনদ ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রোটেকশন অফ অল পারসনস্ ফ্রম এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেনস্’ অনুমোদন করে। কিন্তু বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষরীত ইতিপূর্বে বিভিন্ন সনদ/চুক্তিগুলোর বাধ্যবাধকতা অনুসরন এবং তা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
অধিকার মনে করে এখনই সুযোগ এসেছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এই সকল সনদ/চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা এবং জনগণের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।
সংহতি প্রকাশে
অধিকার টিম
Array