আজ, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (OMCT) এর সদস্যরা অধিকারের কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। OMCT নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ বন্ধ করতে, ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে এবং বিপদের সম্মুখীন মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা দেবার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ২০০টি সদস্য সংগঠনের সাথে কাজ করে চলেছে। অধিকার সহ OMCT এর সদস্য সংগঠনগুলো ৯০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়ভাবে নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধিকার বাংলাদেশে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। আজকের এই সভায় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা, OMCT এর মানবাধিকার কর্মকর্তা ড. নিকোল বুড়লি এবং আমির সালিমি, অধিকার এর সেক্রেটারী ড. সায়রা রহমান খান, পরিচালক এএসএম নাসিরউদ্দিন এলান, জ্যেষ্ঠ গবেষক তাসকিন ফাহমিনাসহ অধিকার সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষক তাসকিন ফাহমিনা অধিকার সংস্থার কার্যক্রম এবং বাংলাদেশে নির্যাতন বিষয়ক একটি প্রেজেন্টেশন করেন। অধিকার এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৮৯ জন ব্যক্তিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলে অধিকার ধারণা করছে।
OMCT এর মানবাধিকার কর্মকর্তা ড. নিকোল বুড়লি এবং আমির সালিমি নির্যাতিতদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। তাঁরা নির্যাতন, গুম এবং অবৈধভাবে আটককৃত ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিজ্ঞতা শোনেন। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন, ২০১৩ এর বাস্তবায়নের অভাবই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা চলমান নির্যাতনের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৮ জুলাই ২০১৭ তারিখে মো. শাহজালালকে (খুলনা) ছিনতাইয়ের সন্দেহে পুলিশ আটক করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করে। পুলিশ হেফাযতে থাকাকালীন সময় তাঁর দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয়। ২৩ আগস্ট ২০১৮ সালে মো. আরিফ বিল্লাহ (ঢাকা) গুমের শিকার হন এবং তাঁকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করলে তাঁকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে লাথি দেওয়া হয় ও পিটানো হয় এবং তিনি জ্ঞান হারান। নির্যাতনের কারণে আরিফ বিল্লাহ এর বাম হাত প্রায় অকেজো হয়ে যায়। ১১ এপ্রিল ২০২১ সালে আজিজুল হক ইসলামাবাদী (চট্টগ্রাম) কারাগারে অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন; তাঁকে না খাইয়ে রাখা হয়, নির্যাতন করা হয়, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচ্ছন্নতার সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং গাদাগাদি করে ছোট কক্ষে রাখা হয়। ১৬ জুন ২০২১ সালে মো. সাইফুল ইসলামকে (চট্টগ্রাম) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশ হেফাযতে থাকাকালীন তাঁকে চরম নির্যাতন করা হয় এবং তাঁর পায়ে গুলি করা হয়। জীবন রক্ষার স্বার্থে ১৯ জুন তাঁর একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
নির্যাতিত ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার, চিকিৎসার সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণের দাবী করেছেন। তাঁরা পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা এবং কারা ব্যবস্থার সংস্কার চান। সভায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) এর চরম মানবাধিকার লংঘনের কারণে এর বিলুপ্তির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়।